দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বরিশাল নগরে স্কুল ছাত্রী তামান্না আফরিনের (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। তার রেখে যাওয়া একটি চিরকুটের সূত্র ধরে কথিত প্রেমিকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে মাত্র ১৫ বছরের ওই স্কুলছাত্রীকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেওয়ার পেছনে কথিত প্রেমিককে দায়ী করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন মৃত স্কুল ছাত্রী তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু। ছাত্রীর বাবা টিপু জানান, কথিত প্রেমিকের প্ররোচনায় ২ এপ্রিল তার মেয়ে তামান্না আত্মহনন করেন। আর তার চার দিন পর ৬ এপ্রিল তিনি প্রমাণ সংগ্রহ করে কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত সাদমান গালিবকে গ্রেপ্তার কিংবা তার অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করেনি। যদিও কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, আর তদন্ত সাপেক্ষেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রীর বাবা যে লিখিত অভিযোগটি দিয়েছেন, সেটিও আমলে নিয়ে দ্রুত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় দৃস্টান্তমূলক বিচারও দাবী করেন তামান্নার মা জাকিয়া বেগম। তামান্নার বাবা টিপু জানান, প্রায় ছয় মাস আগে তামান্নাকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যায় গালিব। খবর পেয়ে তার বাবা ও মা গালিবের বাসা থেকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তামান্নাকে উদ্ধার করে। ওইদিন গালিব তামান্নার অশালীন ছবি এবং ভিডিও মোবাইল ফেনো ধারণ করে রাখে বলে অভিযোগ করেন তামান্নার বাবা। পরে ওই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তামান্নার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবী করে গালিব। ওই ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল করে তামান্নার সঙ্গে বিভিন্ন সময় গালিব শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় বলে সন্দেহ করেন তার বাবার। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে গালিব তার কথিত প্রেমিকা তামান্নার কাছ থেকে সটকে পড়ে। গত কিছুদিন ধরে তামান্নার সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় গালিব। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সে। প্রেমিকের প্রতারণার কারণে অভিমানে গত ২ এপ্রিল দুপুরে নানা বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন করেন তামান্না। তামান্নার মৃত্যুর পর তার পড়ার টেবিলে খাতায় তামান্নার হাতের লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় তার পরিবার। চিরকুটে লেখা রয়েছে, আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধু একজনই দায়ী। তার নাম হলো সাদমান গালিব। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ও (গালিব) আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি সাদমানকে অনেক ভালোবাসি, ও বুঝল না। আশা করি আমার মরার পর ও (গালিব) আমার ভালোবাসাটা অনুভব করবে। আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। বিদায় সাদমান। ওই চিরকুটসহ গত মঙ্গলবার সাদমানের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে তার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু। এদিকে তামান্নার লাশ উদ্ধারকারী কোতয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক অলিভ জানান, তামান্নার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ফোনে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, ওই মেয়েটির মোবাইল ফোনে পাওয়া বিভিন্ন ছবি এবং তার লেখা চিরকুট যাচাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
Leave a Reply